বাংলাদেশের ঘূর্ণি তোপে হোয়াইটওয়াশ উইন্ডিজ


প্রকাশের সময় :২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ৯:০৮ : অপরাহ্ণ 734 Views

স্পোর্টস ডেস্কঃ-ওয়েস্ট ইন্ডিজকে স্পিনজালে আটকে অ্যান্টিগা-জ্যামাইকার ‘দুঃখ’ ভুলিয়ে দিল বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের পর মিরপুরেও ঘূর্ণিফাঁদ পেতে ক্যারিবীয়দের নাকাল করেছে টাইগাররা। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট জয়টি এসেছে ইনিংস ও ১৮৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের পর কোনো দলকে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। সঙ্গে লাল-সবুজরা এই প্রথম ইনিংস ব্যবধানে কোনো টেস্ট জিতল।

শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে প্রতিপক্ষকে প্রথমবার ফলো-অনে ফেলার পর ঝটপট উইকেট তুলে তৃতীয় দিনের চা-বিরতির আগেই ম্যাচ শেষ করে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এ অফস্পিনার প্রথম ইনিংসে ৭ ও দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ৫ উইকেট।

দুই ম্যাচের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৪০ উইকেট পড়ল স্পিনে। চট্টগ্রামের পর মিরপুর টেস্টেও ক্যারিবীয়দের ২০ উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশের স্পিন-চতুষ্টয়। দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল ইসলাম নেন ৩ উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও নাঈম হাসান।

মিরপুরে এ পর্যন্ত ৫ টেস্ট জয়ে প্রতিপক্ষের ৯২ উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। দুটি রান আউট আর দুই ব্যাটসম্যান চোটের কারণে ব্যাটিংয়ে নামেননি। পেসাররা নেন মাত্র ৪ উইকেট। এ ম্যাচে টাইগারদের একাদশে বিশেষজ্ঞ কোনো পেসার রাখার প্রয়োজন পড়েনি সে কারণেই!

ইনিংস ব্যবধানে জয়ের সম্ভাবনা উঁকি দেয় রোববার তৃতীয় দিনের প্রথম ঘণ্টায় উইন্ডিজের শেষ ৫ উইকেট তুলে নিলে। আগের দিন ৫ উইকেট হারিয়ে ৭৫ রান তোলা ক্যারিবীয়রা যোগ করতে পারে আর মাত্র ৩৬ রান। ১১১ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর ফলো-অনে পড়ে আবারও ব্যাটিংয়ে নামে তারা। ৩৯৭ রানে পিছিয়ে থাকা দলটি অলআউট হয় দুইশ পার করার পর।

বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণে নেতৃত্ব দেন মিরাজ। মিরপুর টেস্টে মোট ১২ উইকেট নিয়ে নাম লেখান সাকিব আল হাসানের পাশে। ম্যাচে দুইবার ১০ উইকেট শিকার করা একমাত্র বাংলাদেশি বোলার ছিলেন এ বাঁহাতি স্পিনার। অধিনায়কের কীর্তিতে ভাগ বসালেন খুলনার তরুণ।

২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরাজ শিকার করেন ১২ উইকেট। সেই মিরপুরে এবার উইন্ডিজের বিপক্ষে নিলেন ১২ উইকেট। কম রান দেয়ায় এটিই থাকছে এগিয়ে। ম্যাচে একবার করে ১০ উইকেট শিকার করা অন্য দুই বোলার এনামুল হক ‍জুনিয়র ও তাইজুল ইসলাম।

প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৯ রানে হারিয়েছিল প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানকে। দ্বিতীয় ইনিংসে একই রানে তারা হারায় ৪ উইকেট। চরম ব্যাটিং বিপর্যয় থেকে এবারও হাল ধরেন শিমরন হেটমায়ার। শাই হোপের সঙ্গে ৫৬ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের জয়োল্লাসের অপেক্ষা বাড়ান।

হার নিশ্চিত জেনেই আক্রমণে যান হেটমায়ার। টি-টুয়েন্টি স্টাইলে খেলে ৯২ বলে করেন ৯৩ রান। মাত্র একটি চার মারলেও ছক্কা হাঁকান ৯টা। মিরাজের বলেই ধরা পড়েন এ বাঁহাতি। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে লংঅনে মিঠুনের হাতে ক্যাচ তুলে দিতেই লেজ বেরিয়ে পড়ে ক্যারিবীয়দের।

চার মাস আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট সিরিজে নাভিশ্বাস উঠেছিল বাংলাদেশের। ৪৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই ২-০তে সিরিজ হারের বেদনা জাগ্রত রেখেই খেলতে নামে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষকে ঘরের মাঠে পেয়ে সেই যন্ত্রণা ফিরিয়ে দিল। ক্যারিবীয়রা পেস তোপে নাকাল হয়েছিল টাইগাররা। এবার তাদের স্পিনবিষে নীল করলেন মিরাজ-সাকিব-তাইজুল-নাঈমরা।

বাংলাদেশের করা ৫০৮ রানের জবাবে ম্যাচের দ্বিতীয় দিন উইন্ডিজের পাঁচ ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরেন বোল্ড হয়ে। যেখানে মিরাজের শিকার ৩ উইকেট। তৃতীয় দিনের সকালে প্রতিরোধ গড়া শিমরন হেটমায়ারকে সোজা ব্যাটের শটে দারুণ ক্যাচ নিয়ে কট অ্যান্ড বোল্ড করেন এ বাঁহাতিকে। করে যানন ৩৯ রান। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে আসে ৫৭ রান। ২৯ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর এই জুটিটাই ছিল সফরকারীদের শেষ ভরসা।

দেবেন্দ্র বিশু নেমেই মিরাজের শর্ট বলে কাভার ড্রাইভ করতে গিয়ে সিলিতে ক্যাচ দেন সাদমান ইসলামের হাতে। বিশু জোরের উপর খেললেও বলের উপর থেকে চোখ সরাননি সাদমান। লুফে নেন দারুণ ক্যাচ। ঝটপট দুই শিকার করে ষষ্ঠবার ৫ উইকেট কীর্তিতে নাম লেখান মিরাজ। কেমার রোচ এসেও সময় নেননি সাজঘরে ফিরতে। উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন মিরাজের বলেই।

মিরাজকে সপ্তম উইকেট দিয়ে ডওরিচ ফেরেন দলের রান একশ পার করে। ৩৭ রান করা এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হন এলবিডব্লিউ। রানের খাতা খোলার আগেই ক্যারিবীয়দের শেষ ব্যাটসম্যান লুইস সাকিবের ঘূর্ণিতে হন এলবিডব্লিউ। পরের ইনিংসে মিরাজের সপ্তবার টেস্ট ইনিংসে পাঁচ উইকেটের কীর্তি গড়ার পাকে পড়ে ইনিংস ব্যবধানে হারল সফরকারীরা।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
October 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!