ঈদ উৎসব অনন্য ইবাদাত


প্রকাশের সময় :২ জুন, ২০১৮ ১০:২৯ : অপরাহ্ণ 819 Views

আশরাফ হুমাইদঃ-ঈদুল ফিতর মুসলিম সম্প্রদায়ের দুই ঈদ’র দুই উৎসব’র অন্যতম একটি।মূলত এ উৎসব কোন নিছক আনন্দ উল্লাসের জন্য নয়।নতূন কাপড় পরিধানের জন্য নয়।উন্নতমানের আহার গ্রহনের জন্য নয়।কোন আনুষ্ঠানিকতা নয়।ঈদ ভেদাভেদহীন সমাজের কথা বলে।ভালবাসার বন্ধন দৃড় করে। পারষ্পরিক সহযোগীতা,সহমর্মিতা ও কল্যাণ কামনার শিক্ষা দেয়।ঈদ ধনী-গরীব সব মানুষে আনন্দের জোয়ার আনে। কবি বলেন “খুশির হাওয়া নিয়ে আজি এলো ঈদের দিন,ধনী-গরীব নেই ভেদাভেদ,নেইকো দুখের চিন।” সর্বপরি ঈদ উৎসব মুসলমান’র জন্য আল্লাহ কর্তৃক প্রবর্তিত এক অতুলনীয় উপহার।

ঈদ উৎসব দুনিয়ায় কিছু পাওয়াকে কেন্দ্র করে নয়।কোন কিছু প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষায় উচ্ছ্বসিত হয়ে এ উৎসব উদযাপিত হয়না।কারো শুভাগমনে এ উৎসব’র আয়োজন হয়না।এ উৎসব সিয়াম’র মাধ্যমে রবের নৈকট্য লাভের উৎসব। পাপ মোচন শেষে আত্মতৃপ্তির উৎসব। ক্ষমা লাভের উৎসব।দোযখ থেকে মুক্ত হয়ে জান্নাত প্রাপ্তির উৎসব।দোযখ থেকে মুক্তিলাভের উৎসব।এ উৎসবের বহিঃপ্রকাশ মার্জিত রুচিপূর্ণ,হৃদয়গ্রাহী।এ উৎসবে খুশীর আমেজ আছে তবে কোন বিশৃিঙ্খলা নেই।হৃদয়ের আনন্দের শত রঙে পালিত হয় এ খুশী।এখানে অযথা রঙ ছোড়াছুঁড়ি নেই। যৌন উশৃঙ্খলতা নেই।ঢোল ডাগর বাজিয়ে শব্দ দূষণের অবকাশ নেই।এ এক মহোৎসব যা মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকেই নিয়ন্ত্রিত।সীমালঙ্ঘনের সুযোগ এখানে একেবারেই রুদ্ধ। এ উৎসব এক ইবাদত।অতিরঞ্জন এখানে কাঙ্ক্ষিত নয়।

জ্ঞান-বিজ্ঞান উৎকর্ষের এই সময়ে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মানুষে মানুষে সৌভ্রাতৃত্ববোধ।ভালবাসার পুনর্জাগরণ,মহামিলন।বস্তুত ঈদুল ফিতর সেই ভ্রাতৃত্ব বোধেরই উদাত্ত আহ্বান জানায়।হিংসা-বিদ্বেষ পরিহারে মহান শিক্ষা দান করে।মহামিলনের জয়ভেরী বাজায়।তাইতো মনিব সম্রাট ও চাকর একে অপরকে বুকে জড়িয়ে কোলাকুলি করে।ভেদাভেদহীন ভ্রাতৃত্ববোধের পবিত্র নির্ঝরিণীতে অবগাহন করে ধন্য হয়।ঈদুল ফিতর ঠেলা চালক আর ধনকুবের মিলন মেলায় রুপ নেয়। আতুর,নুলা,কাঙাল,এতিম,অভিজাত,সম্রান্ত,ধনাঢ্য সবাই কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে নামায আদায় করে।মহামিলনের এই স্বর্গীয় রুপ স্বপ্নীল খুশীকে বাস্তব খুশিতে রুপান্তর করে। বিরল স্বাতন্ত্র্যধর্মী এক মহা উৎসবে সারাটি নিখিল মেতে ওঠে।

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম পালন ছিল ফরজ।রোজা না রাখা ছিল হারাম।আর এ ঈদের দিন রোজা রাখাই হারাম।সিয়াম’র দিন গুলোতে আল্লাহ চান তাঁর বান্দা পানাহার না করেই তাঁর দাসত্ব প্রকাশ করুক।আর ঈদের দিন পানাহার’র মাধ্যমেই তাঁর দাসত্ব দেখাক।আসলে পানাহার গ্রহন বা বর্জন বড় কথা নয়।বড় কথা হল কে রবের দাসত্ব প্রকাশ করছে সেটাই পরখ করা।কারণ এ দাসত্ব স্বীকারই যে ইবাদাত।এ কারণে ঈদ মুসলমান’র জন্য শুধু উৎসব’ই নয় বরং মহান এক ইবাদাত।

এ উৎসব শুরু হয় তাকবির ধ্বনির মাধ্যমে।ফজর নামাজ শেষেই উচ্ছ্বসিত কন্ঠে সমবেত হাজার মুুসল্লি মাহাত্ম্য ঘোষণা করে বলে উঠে- আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ।(আল্লাহ মহান,আল্লাহ মহান।আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।আল্লাহ মহান। আল্লাহ মহান।আল্লার জন্যই সকল প্রশংসা।) ঈদগাহের রাস্তায়ও যেতে যেতে এই তকবীর পাঠের প্রচলন রয়েছে।খুশির সাথে রবের এই মহত্ত্বের স্লোগানের সমন্বয় কতই না অপূর্ব। স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনার পাশাপাশি আনন্দ উল্লাস কতই না অতুলনীয়।

‘আনন্দ ভোগে না ত্যাগে’-এ নিয়ে যথেষ্ট তর্ক-বিতর্কের সুযোগ থাকলেও বাস্তবতার নিরিখে কিন্তু ত্যাগেই ভোগের চেয়ে আনন্দ বেশী।এ জন্য ইসলাম সীমার মধ্যে থেকে ভোগকে নিষেধ না করলেও ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। এমন কি কোথাও কোথাও ত্যাগকে অনিবার্য করেছে।অনিবার্য ত্যাগের জ্বলন্ত উদাহরণ হল সাদাকাতুল ফিতর। যার অর্থ হল রোজা ভংগের দান।অন্যান্য দানের মত এ দান রবের রবের উদ্দেশ্যেই নিবেদিত হয়। তাঁর নির্দেশেই এ দান আদায় করা হয়।এ দান ইবাদত। এ দান অহেতুক নয়।এ দান প্রত্যেক সামর্থ্যবান দিতে বাধ্য। এ দানকে উপেক্ষা করার কোনো অবকাশ নেই।ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই এই অনিবার্য দান পরিশোধিয়।এ দান কাঙাল,অনাথ, আতুর,দরিদ্র, ফকির, মিসকিনের অত্যাবশ্যকীয় পাওনা।এই পাওনা অনুগ্রহের নয়, এ তাদের অধিকার।এ পাওনা পরিশোধ না করলে সিয়াম কবুল না হওয়ার হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে হাদীস গন্থে।

এ মহোৎসব খুশী ও আল্লাহর অনুগত্যের এক অপূর্ব সমন্বয়। আল্লার শ্রেষ্টত্ব ও মহিমা প্রকাশের অতুলনীয় কর্ম তৎপরতা।এ দিনের দু’টি মূল কাজের একটি হচ্ছে সাদাকাতুল ফিতর, যে সম্পর্কে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।অপরটি হচ্ছে ঈদগাহে নামায আদায় করা।এ নামায ওয়াজিব। অবশ্যই পালনীয়। বার বার নিজের রবের শ্রেষ্টত্ব ঘোষণার মধ্য দিয়েই শুধু এই খুশী পালিত হয় না,তাঁর ইবাদত চূড়ান্ত রূপ,তাঁকে বন্দনার সর্বশেষ অবস্থা নামায আদায়ের মাধ্যমেই বান্দা নিজেকে সোপর্দ করে রবের কাছে।খুশির মাঝেও বান্দা তার রবকে ভুলে না।বরং তারই বন্দনার মাধ্যমেই ঘোষণা দেয়,হে রব!আমার এ খুশিত তোমারই দান তোমারই অনুগ্রহ,তোমারই অনুকম্পা।তোমাকে আরোধনা করাই এ খুশীর সার্থকতা।

তাইতো এ ঈদ ইবাদাত।এ ঈদ খুশীর।এ ঈদ আনন্দের,এ ঈদ স্রষ্টার অনুগত্যের এক অনুপম দৃষ্টান্ত।যেখানে খুশীর সাথে রয়েছে অনিবার্য দান ও অত্যাবশ্যকীয় নামাযের পরিকল্পিত আয়োজন। স্রষ্টার গুনগানের সুন্দর ব্যবস্থা।খুশীর মাঝেও ইবাদাতের এই সমন্বয় এই ঈদকে করেছে সুন্দর,প্রাণবন্ত,সার্থক।সুন্দর।

লেখকঃ-সহযোগী সম্পাদক
শীলনবাংলা ডট কম।
ইমেইল:ashraf_rbsl@yahoo.com

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
July 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!