রোহিঙ্গা সংকট সামাল দিতে ব্যর্থতার দায় স্বীকার জাতিসংঘের


ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশের সময় :২১ জুন, ২০১৯ ৪:০৭ : অপরাহ্ণ 750 Views

২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা বিরোধী হত্যাযজ্ঞ ঠেকাতে ‘পদ্ধতিগত ব্যর্থতার’ দায় স্বীকার করেছে জাতিসংঘ। সোমবার (১৭ জুন) জাতিসংঘ মহাসচিবের নিয়োগকৃত গুয়েতেমালার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গের্ট রোসেনথাল ৩৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেন। সেখানে বলা হয়, রাখাইন সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘের সমন্বিত কোনো কৌশল ছিল না। নিরাপত্তা পরিষদও এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করেনি। এসব ব্যর্থতার কারণেই ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা দলে দলে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

এদিকে, জাতিসংঘের মানবিক বিষয় সমন্বয় সংক্রান্ত কার্যালয়ের (ইউএনওসিএইচএ) তথ্য বলছে, ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ সালে মার্চ মাস পর্যন্ত ৯ লাখ ৯ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।

মিয়ানমারের বিশ্ব সংস্থাটির কর্মকর্তাদের ক্রিয়াকলাপে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়টি লুকানো হয়, এমন অভিযোগের প্রেক্ষাপটে গত ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেসের নির্দেশ অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধানে এমন ব্যর্থতার বিষয়গুলো প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

পদ্ধতিগত ব্যর্থতার কথা বললেও এর সঙ্গে দায়ীদের শনাক্ত করা কঠিন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। নতুন এই প্রতিবেদন বলেছে, ‘জাতিসংঘের নীতিমালা অনুযায়ী ঘৃণ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে না নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষই যৌথভাবে দায়ী।’

দুই বছর আগে যখন রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস নিপীড়নের খড়গ নেমে আসে, তখন মিয়ানমারে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি ছিলেন রেনেটা লক ডেসালিয়ান। মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে তিনি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস নিপীড়নের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও তৎকালীন সময়ে জাতিসংঘ এই সব অভিযোগ অস্বীকার করে।

৩৬ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন গুয়াতেমালার প্রখ্যাত কূটনীতিক গার্ট রোজেনথাল। প্রতিবেদনে তিনি রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিষয়ে স্বচ্ছ ও একতাবদ্ধ কৌশলের অনুপস্থিতি এবং মাঠ পর্যায়ে পদ্ধতিগত ও একতাবদ্ধ বিশ্লেষণের ত্রুটির কথা উল্লেখ করেন। রোহিঙ্গা নিপীড়ন ঠেকাতে জাতিসংঘের ব্যর্থতার কারণগুলো নিয়ে তিনি লেখেন, মিয়ানমারে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অতি উৎসাহ একটি কারণ।

অধিকার বিষয়ে অস্বস্তি :

রোজেনথাল লিখেছেন যে, রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সংগ্রহকৃত বাস্তব সময়ে ঘটনাগুলির তথ্য বিশ্লেষণের, সমন্বয় এবং ভাগ করার প্রয়োজন। পাশাপাশি বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাখ্যাগুলির সঠিক বিশ্লেষণ করলে রোহিঙ্গা ইস্যুর বিষয়ে সঠিক তথ্যগুলো জানা যাবে। এই বিষয়ে জাতিসংঘকে আরো বেশি সক্রিয় হতে হবে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের ব্যর্থতার কারণগুলির বিষয় এই কূটনীতিক আরো লিখেছেন, মিয়ানমারের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে আন্তর্জাতিক বিশ্বের আকর্ষণ বিশেষ করে দেশটির নেত্রী আং সান সু চি’র কিংবদন্তি অবস্থা নিয়ে বৈশ্বিক মহলে অতিরিক্ত আকর্ষণ সৃষ্টি হওয়ায় রোহিঙ্গা নির্যাতনের আসল চিত্রগুলো দাবিয়ে রাখা হয়।

রোজেনথাল বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তৎকালীন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার জেইদ রা’আদ-আল হোসেন প্রায়ই সমালোচনা করতেন। এই বিষয়টি জাতিসংঘের কিছু মানুষের মধ্যে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছিল, যারা মুখে কুলুপ আঁটা কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে কাজ করতেন।

এই বিষয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিচ বলেন, মহাসচিব গুতেরেস সুপারিশগুলো গ্রহণ করেছেন এবং জাতিসংঘের কার্যপদ্ধতির উন্নতি করতে সেগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

অন্যদিকে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জাতিসংঘের পরিচালক লুই চরবোনিউ বলেছেন, মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার পুরোটা দায় জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের। তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। এই ঘটনায় জাতিসংঘ নতুন একটি শিক্ষা পেল কারণ প্রতিষ্ঠানটির সীমাবদ্ধতা ও ভুলের কারণে বিশ্বব্যাপী বিশৃঙ্খলা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
December 2025
MTWTFSS
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30 
আলোচিত খবর