

সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-অত্যাচার-নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্যে এবার ত্রাণ সহায়তা পাঠাবে চীনও।ত্রাণ পাঠানোর তালিকায় চীনের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।সরকারের একাধিক নীতি-নির্ধারকও বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন।রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন মিয়ানমারের দিকে ঝুঁকে থাকলেও এখন আর তা নেই।এটাই শেখ হাসিনার কূটনীতিক সফলতা বলে জানিয়েছে নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বাংলাদেশে ত্রাণ সহযোগিতা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন সরকার।’ তিনি জানান,বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের দূতাবাস বিষয়টি আমাদের নিশ্চিত করেছে।খুব শিগগিরই চীন থেকে ত্রাণ আসবে রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রে।তিনি বলেন, ‘চীন থেকে ত্রাণ আসা মানে রোহিঙ্গাদের প্রতি দেশটির সমর্থন ব্যক্ত করা ।’ সরকারের দু’জন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন,মিয়ানমারের বন্ধুরাষ্ট্র চীন রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটিয়েছে।রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাদের অত্যাচার-নির্যাতনের ভয়াবহতা এত জঘন্য ছিল,সেটা চীনের ধারণার মধ্যে ছিল না। মিয়ানমার তাদের ভুল বুঝিয়েছে।ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে অত্যাচার-নির্যাতরে ভয়াবহতা চীনকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি আমরা।এরইমধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ৫৩ টন ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছে ভারত। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভারতীয় ত্রাণবাহী সি-১৭ বিমানটি অবতরণ করে।ভারতীয় ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে-চাল,ডাল,তেল,চিনি,লবণ,বিস্কুট,গুঁড়ো দুধ,নুডলস ও মশারি।ত্রাণ গ্রহণ করে ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।সরকারের নীতি-নির্ধারকরা জানিয়েছেন,রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পক্ষে চীন অবস্থান নিলেও এ পর্যায়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়েছে।তাদের দাবি,চীনের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবতর্নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ভূমিকা রেখেছে।সূত্র জানায়,সরকার ও আওয়ামী লীগ বিভিন্ন মাধ্যমে চীনের সঙ্গে যোগাযোগের ফলে চীন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে।তারা আরও জানিয়েছে,রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদেও বিরোধিতা করবে না,এমন তথ্য বাংলাদেশকে অবহিত করেছে চীনের কমিউনিস্ট সরকার।এরই অংশ হিসেবে নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠকে চীন রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমারের অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছে।ফারুক খান বলেন, ‘মিয়ানমার আগে চীনকে ভুল বুঝিয়েছে।ফলে মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করে চীন।কিন্তু তারা যখন রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের সঠিক চিত্র দেখে চীন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু চীনই নয়, আমেরিকা,ইউরোপসহ পৃথিবীর শক্তিধর দেশগুলো এখন রেহিঙ্গাদের পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেছে।’ ফারুক খান বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে বলেই কিছুটা কৌশলী ভূমিকায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টিয়েছে চীন।’ এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড.শাম্মী আক্তার বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের ভয়াবহতা এতটা জঘন্য যে,চীন সরকার ধারণাই করতে পারেনি।বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছেন এর ভয়াবহতা।তাই চীন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে।রোহিঙ্গাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে চায় চীন।’ জানা গেছে,আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে দেশটিতে সফরে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল।দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলে আরও রয়েছেন-যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা.দীপু মনি,আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড.শাম্মী আক্তার,আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ.ম. রেজাউল করিম,বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন,প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ-দফতর সম্পাক বিপ্লব বড়ুয়াসহ অন্যরা।জানা গেছে, সেখানে ফোকাস পয়েন্ট থাকবে রোহিঙ্গা ইস্যু।রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের সমর্থন চাইবে আওয়ামী লীগের এ প্রতিনিধি দল।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফারুক খান বলেন, ‘চায়না কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে চীন সফরে গিয়ে আমরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বলবো।সেখানে নিশ্চয়ই আমরা রোহিঙ্গাদের পক্ষে চীনের সমর্থন আদায় করে আনতে সক্ষম হবো।’(((বাংলা ট্রিবিউন)))