সুগন্ধী তুলসীমালা ধানে আগ্রহ বাড়ছে শেরপুরে


সিএইচটি টাইমস অনলাইন প্রকাশের সময় :২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ৮:৫২ : পূর্বাহ্ণ 438 Views

শেরপুরকে ‘পর্যটনের আনন্দে, তুলসীমালার সুগন্ধে’ স্লোগানে ব্র্যান্ডিং করার পর থেকে বাড়ছে সুগন্ধী তুলসীমালা ধানের চাহিদা।

এর চাল সুগন্ধী, ছোট ও সুস্বাদু। পোলাও, ফ্রাইড রাইস, বিরিয়ানির জন্য বিশেষ উপযোগী। বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসব, পার্বণ ও অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নে বেশি ব্যবহৃত হয়।

কয়েক বছর আগে সরকার সব জেলাকে স্থানীয় বিশেষত্ব দিয়ে পরিচিত করানোর উদ্যোগ নেয়। সে সময় জেলা প্রশাসন শেরপুরের জন্য তুলসীমালা ধানকেই বেছে নেয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ মোবারক হোসেন বলেন, “শেরপুর জেলাকে ব্র্যান্ডিং করার জন্য তুলসীমালা ধান বেছে নিয়ে প্রচার চালানোর কারণে এর চাহিদা ও আবাদ দিন দিন বাড়ছে।”

তিনি বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ জেলায় এ ধানের আবাদ হয় ১৩ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে। পরের অর্থবছর এক হাজার হেক্টর বেড়ে হয় হয় ১৪ হাজার ৫৪০ হেক্টর।
সমগ্র জেলায় এ ধানের আবাদ হলেও শেরপুর সদর ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় বেশি হয়।

নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরীফ ইকবাল বলেন, নালিতাবাড়ীর মাটি তুলসীমালার জন্য খুবই উপযোগী। বন্যায় এ ধান নষ্ট হলে পুনরায় রোপণ করে আশাতীত ফলন পাওয়া যায়। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উৎসবে এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। এ ধানের চাল সুগন্ধী, ছোট ও অত্যন্ত সুস্বাদু। পোলাও, ফ্রাইড রাইস, বিরিয়ানির জন্য বিশেষ উপযোগী। মোটা ধানের চেয়ে এই ধানের উৎপাদন কম হলেও বাজারে দাম অনেক বেশি। তাই চাষিরা দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

কৃষি বিভাগ এ ধান উৎপাদনে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, জেলার লক্ষাধিক কৃষক কমবেশি জমিতে তুলসীমালা ধান আবাদ করেন। আনুমানিক ৪০ বছর ধরে এ জেলায় তুলশীমালা ধানের আবাদ হয়ে আসছে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, তুলসীমালা ধানের বীজ বোনার সময় শ্রাবণ মাসের প্রথম থেকে তৃতীয় সপ্তাহ। ধানের রং কালচে ধূসর। একরপ্রতি এ ধানের ফলন ২৫ থেকে ৩০ মণ। সারা বছর এ ধানের চাল ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসব, পার্বণ ও অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নে বেশি ব্যবহৃত হয়।

শেরপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি রাইস মিল মালিক আসাদুজ্জামান রওশন বলেন, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই তিন মাস তুলসীমালা ধান বাজারে মেলে। এ সময় কিনে রাখা ধান দিয়ে চলে সারা বছর। আগে চাষিরা নিজেদের প্রয়োজনে ঈদ, বিয়েশাদি, পূজা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্যে খুব কম পরিমাণ জমিতে এ ধান আবাদ করতেন।

এখন অনেকে বাণিজ্যিক উদ্দেশে চাষ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে এক মণ তুলশীমালা ধান কমবেশি ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি চালের দাম ৭৫ টাকা, প্রতিমণ তিন হাজার টাকা।
ভোক্তারা জানান, ফিন্নি-পায়েসসহ বিভিন্ন মজাদার খাবার তৈরিতে তুলশীমালার বিকল্প নেই।

এ নিয়ে ফেইসবুকে প্রশংসা করেছেন অনেকে।

ফাতেমা-তুজ-জহুরা রজনী নামে এক নারী তার ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, “তুলসীমালা খেতে এতই মিষ্টি যে আমার মনে হয়েছে এটা এমনিতেই খাওয়া যায়। আমার মেয়ে খুউব মজা করে খেয়েছে।”

ফারিয়া আবেদীন রাফা নামে এক নারী লিখেছেন, “তুলসীমালা পুরাই বাজিমাত করেছে। তুলসীমালা দিয়ে পায়েস অনেক মজা হয়েছে। আমি পুরা এক বাটি খেয়ে ফেলেছি। ভাবতেছি মেয়ের খিচুড়ি-সুজির জন্যে ভাঙ্গিয়ে নেব।”

‘আওয়ার শেরপুর’ নামে একটি ওয়েবসাইটের পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “এই ধানকে সারা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে আমি দুই বছর ধরে কাজ করছি। তুলসীমালা শেরপুরের গর্ব।”

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
July 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!