শিরোনাম: ৫০ চক্ষু রোগীকে বিনামূল্যে অস্ত্রোপচার ও দেড় শতাধিক চশমা বিতরন এনসিপি কতৃক অনিয়ম দেখলেই ফোন করার আহবান জানালেন জেলা আহবায়ক মংসা প্রু দেশে ফিরেই এভার কেয়ার হাসপাতালে ছুটে গেলেন ডা.জোবাইদা রহমান অবৈধ ইটভাটায় লামা উপজেলা প্রশাসনের অভিযান পূজা উদযাপন ফ্রন্টের উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়া’র রোগমুক্তি কামনায় প্রার্থনা সভা জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে হুইল চেয়ার ও শীতবস্ত্র বিতরন বান্দরবানে নানা আয়োজনে পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র ২৮তম বর্ষপূর্তি উদযাপিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাতিলের দাবীতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পিসিএনপি’র স্মারকলিপি

লংগদুর আগুন ক্ষোভের প্রকাশ,পাহাড়ে চলছে সন্ত্রাস


প্রকাশের সময় :১২ জুন, ২০১৭ ৭:৪৩ : অপরাহ্ণ 792 Views

সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদুতে পাহাড়ি বসতিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সশস্ত্র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রকাশ বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্রগুলো।তারা বলেছেন,গত ১ জুন স্থানীয় যুবলীগ নেতা ভাড়ায় মোটর সাইকেলচালক নূরুল ইসলাম নয়ন হত্যকাণ্ডের আগেও এমন অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছিল।পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর অব্যাহত চাঁদাবাজি,সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের কারণে লংগদুর বাঙালিদের মাঝে ক্ষোভ ছিল দীর্ঘদিনের।তিন পার্বত্যজেলায় পাহাড়ি ও বাঙালির অনুপাত ৫১ ও ৪৯ শতাংশ হলেও রাঙামাটির লংগদুতে সেটা ৬০ ও ৪০ শতাংশ।সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও লংগদুর বাঙালিরা সশস্ত্র পাহাড়ি গ্রুপগুলোর কাছে জিম্মি রয়েছে।স্থানীয়রা বলেছেন,তিন পার্বত্য জেলায় নির্দিষ্ট বিরতীর পর নিয়মিত অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানো হলে পাহাড়ের সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ হতে পারে।

সেদিন আগুন লাগায় কারা:-গত ১ জুন সকালে নূরুল ইসলাম নয়ন তার মোটরসাইকেলে দুজন পাহাড়ি তরুণকে নিয়ে খাগড়াছড়ি যায়। বিকালে তার লাশ পাওয়া যায় রাস্তার পাশে।শনিবার সকালে নয়নের স্ত্রী জাহেরা খাতুন তার বাড়িতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,অনেক অত্যাচার করে,কষ্ট দিয়ে আমার স্বামীরে মারছে তারা।হাতের নখ তুলে নিয়েছে।দাঁত তুলে ফেলেছে।মাথা থেঁতলে দিয়েছে। সকালে দুই চাকমা এসে তারে ডাক দেয়।ভাড়ার কথা বলে নিয়ে যায়।এর আগে দীপালু চাকমা ও ইমন চাকমার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল তার।তিনি বলেন,আমার স্বামীরে মারার পর এলাকার সব চাকমা নিজেদের বাড়িঘর ফেলে মন্দিরে চলে যায়।তাদের নিশ্চয়ই কেউ সতর্ক করেছিল।স্থানীয়রা জানান,পরদিন ২ জুন সকালে জানাজার জন্য লাশ নিয়ে ৬-৭ হাজার মানুষের ভিড় জমে।মানুষ তখন খুবই বিক্ষুব্ধ ছিল।তবে লাশ নিয়ে মাঠে যাওয়ার আগেই আশপাশের দোকান ও বাড়িতে আগুন দেখা যায়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ বলেন, আমরা ছিলাম খুবই উত্তেজিত।কিছু একটা করতে হবে। এমন সময় খবর আসে বাঙালি পাড়ায় আগুন দেওয়া হয়েছে।তখন মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার কেউ ছিল না।তিনি বলেন,আমাদের অবস্থানের এক কিলোমিটার দূরেও আগুন দেওয়া হয়েছে,সেখানে আমাদের কেউ যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।আগুনের ঘটনায় আরও কারা ছিল তদন্ত করে বের করা উচিত।

আন্তর্জাতিক সহানুভূতি লাভের চেষ্টা:-ঘটনার ৯ দিন পরও শনিবার পর্যন্ত নিজেদের বসতিতে ফিরে আসেনি লংগদুর পাহাড়ি পরিবারগুলো।তাদের অধিকাংশই সরকারের পুনর্বাসন কেন্দ্রেও যাননি।অবস্থাপন্নদের একটা অংশ রাঙামাটি শহরে নিজেদের স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন।বাকিদের অনেকে জেএসএস ও ইউপিডিএফের তত্ত্বাবধানে আছেন।তাদের ফিরতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন,আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রান্না করে ছিলাম।তারা বলেছেন,খাবার নিতে আসবেন।কিন্তু পরে তারা জানায়, তাদের খাবার নিতে মানা করা হয়েছে।সূত্র জানায়,ক্ষতিগ্রস্ত গৃহহীন অন্তত ২০টি পরিবারকে জেএসএস-এর সশস্ত্র সদস্যরা মানিক্যাছড়া এলাকার শেষ সীমানায় জিম্মি করে রেখেছে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি পাওয়ার জন্য।তাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে ফিরতে দিচ্ছে না। জেএসএস-এর সশস্ত্র শাখার লংগদু এলাকার কমান্ডার পূর্ণাঙ্গ চাকমা ও সহকারী কমান্ডার প্রবেশ চাকমার ভয়ভীতির কারণে তারা জিম্মি হয়ে আছেন।সূত্র জানিয়েছে,তাদের সেখানে তাঁবু টানিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে,পাহাড়িরা যেমন তাদের শূন্য ভিটায় ফিরে আসেনি তেমনি গণগ্রেফতারের ভয়ে বাঙালিরাও ঘরে থাকতে পারছে না।স্থানীয় স্কুল শিক্ষক ধর্মদর্শী চাকমা (৫৫) বলেন,আমাদের তো ঘর নাই।আমরা কোথায় ফিরব? মন্ত্রী নাসিম স্যার বলে গেছেন,ক্ষতিগ্রস্তদের একটি করে ঘর তুলে দেওয়া হবে।আমাদের নেতারা চেষ্টা করছেন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পেতে।

টার্গেট মোটরসাইকেল:-পার্বত্য জেলাগুলোতে যাত্রী পরিবহনের জন্য মোটরসাইকেল অত্যন্ত জনপ্রিয় বাহন। হাজার হাজার যুবক মোটরসাইকেল চালিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে।গত কয়েক বছর ধরে একের পর এক যাত্রীবেশী সন্ত্রাসীদের হাতে মোটরসাইকেল চালক খুন,গুম ও অস্ত্রের মুখে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনায় এখন চালকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নূরুল ইসলাম নয়ন খুনের আগে গত ১০ এপ্রিল ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক ছাদিকুল ইসলামকে (২৩) দুই পাহাড়ি তরুণ মহালছড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে রাঙামাটির ঘিলাছড়ির উদ্দেশে ভাড়া করে নিয়ে যাওয়ার পর ছাদিকুল ইসলাম নিখোঁজ হন।তিন দিন পর ১৩ এপ্রিল রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলার ঘিলাছড়ি এলাকায় ছাদিকুল ইসলামের ক্ষতবিক্ষত লাশ মাটি চাপা দেওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়।পরে দুই তরুণকে গ্রেফতারের পরে তারা পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেয়।এসব খুন,সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় গত ১৪ মে রাঙামাটি জিমনেসিয়াম মাঠে।এসব হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জেলায় দফায় দফায় হরতাল-অবরোধে উত্তাল হয়েছে।প্রশাসনের কাছ থেকে বিচারের আশ্বাস মিললেও বাস্তবে এসব হতভাগ্য মোটরসাইকেল চালকের জীবনে খুন ও অপহরণের ঘটনা ঘটলেও একটিরও বিচার হয়নি।

রাঙামাটিতে হরতাল পালিত:-ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি থেকে জানান,লংগদু উপজেলা যুবলীগ নেতা নূরুল ইসলাম নয়নের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে ও বাঙালিদের গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে রাঙামাটিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে।গতকাল ভোর ৬টা থেকে হরতালের সমর্থনে মাঠে নামে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতা-কর্মীরা। শহরের শান্তিনগর এলাকার সড়কের সামনে রাস্তায় টায়ারে আগুন দিয়ে সূচনা করা হয় হরতাল কর্মসূচির। সারা দিন চলে বিক্ষোভ মিছিল,পিকেটিং ও পুলিশের ধাওয়া।তবে এসব ঘটনার পরও হরতাল চলাকালে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।হরতালের কারণে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম-বান্দরবান-খাগড়াছড়ি সড়কে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লায় কোনো যানবাহন চলাচল করেনি।ছেড়ে যায়নি নৌপথে কোনো লঞ্চও।দোকানপাট,স্কুল,কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল।নাশকতা এড়াতে কঠোর অবস্থানে ছিল পুলিশ।শহরের বিভিন্ন সড়কে হরতালকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে বিক্ষোভ করছিল তখন পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।এ ছাড়া দুপুরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল করে হরতালের সমর্থকরা।শহরের বনরূপা,পৌরসভা,তবলছড়ি,রিজার্ভ বাজার,কলেজ গেট ও মানিকছড়ি এলাকায় হরতালকারীদের পিকেটিং করতে দেখা গেছে।(((শিমুল মাহমুদ,বাংলাদেশ প্রতিদিন;লংগদু (রাঙামাটি) থেকে ফিরে)))

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
December 2025
MTWTFSS
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30 
আলোচিত খবর