যে ভুলে করোনা ছড়িয়ে পড়ার মহা বিপদের সামনে বান্দরবান !


অন্য মিডিয়া প্রকাশের সময় :২২ এপ্রিল, ২০২০ ৫:৪৩ : অপরাহ্ণ 498 Views

বান্দরবানে এক পুলিশ সদস্যসহ নতুন করে আরও তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর আতংক ছড়িয়ে পড়েছে এই সংকটে সেবাদানকারীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে।কিন্তু কোন ভুলে,কেন কিভাবে করোনা ছড়ানোর আশংখা বান্দরবানে?

আর তা নিয়েই পাহাড় বার্তার নির্বাহী সম্পাদক এস বাসু দাশ এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।যা সিএইচটি টাইমস ডটকমের পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলোঃ

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বান্দরবানে থানচি উপজেলার বড়মদকের করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা সংগ্রহের পর তার রিপোর্ট প্রথমে নেগেটিভ আসলেও সে অসুস্থ হয়ে পড়ার কারনে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এসময় সদর হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক তাকে আইসোলশনে ভর্তি না করিয়ে তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি করায়। তিনি সেখানে ২দিন চিকিৎসা গ্রহন করে এবং পরে তার নমুনা পরীক্ষা করা হলে তার রিপোর্ট পজেটিভ আসে।

আরো জানা গেছে, করোনা উপসর্গ নিয়ে থানচি থেকে বান্দরবান হাসপাতালে এই রোগীকে আনা হলেও তাকে আইসোলেশনে না রাখার কারনে বান্দরবানের জন্য বিপদ বয়ে আসে। সেই সাথে এই দুই দিন সাধারণ ওয়ার্ডে থাকা এই রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসক, আয়া ও ওয়ার্ডের পাশে থাকা রোগীদের করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দিন সদর হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে থাকা রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসকরা বাইরে তাদের চেম্বারে রোগী দেখেন। সেই কারনে, জেলায় অন্তত শতাধিক ব্যক্তির কাছে করোনা ছড়াতে পারে, তাদের মধ্যে সংক্রমন হতে পারে অনেকে।

আরা জানা যায়,তার মধ্যে বান্দরবানে করোনা টেস্ট করার কোন ল্যাব নাই। জেলার পরীক্ষা কক্সবাজার মেডিকেল হাসপাতালের করোনা সংক্রান্ত পিসিআর ল্যাবে ও চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করতে হচ্ছে। ফলে টেস্ট রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়ার কারনে দ্রুত পরীক্ষা করে করোনা রোগী সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছেনা।

বান্দরবান সদর হাসপাতালে এক চিকিৎসক নাম প্রকাশে না করার শর্তে বলেন, এই মুহুর্তে যদি হাসপাতালের ঐ রোগী, চিকিৎসক ও আয়াদের সংস্পর্শে যারা এসেছে তাদের ৪৮ ঘন্টা পর যদি করোনা পরিক্ষার ব্যবস্থা করা না হয় তাহলে বান্দরবানের জন্য কি ভয়ংকর বিপদ অপেক্ষা করছে তা বলে বুঝানো যাবেনা।

এদিকে জেলার থানচি উপজেলা সোনালী ব্যাংকের এক পুলিশ প্রহরী ও একজন ঠিকাদার এবং লামা উপজেলায় এক নারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এনিয়ে জেলায় মোট চারজন করোনা রোগী শনাক্ত হলো। ইতিমধ্যে থানচিতে দুজন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকসহ মোট ৭ জন, তাছাড়া বোট ড্রাইভার, স্থানীয়সহ মোট ৬০জন, বান্দরবান সদর হাসপাতালের ১০ চিকিৎসক এবং ১২জন আয়াকে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, দুই ব্যক্তি করোনা আক্রান্তের পর থানচি উপজেলার দুটি বাজার লক ডাউন করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া লামা উপজেলায়ও করোনা আক্রান্ত একজনের বাড়ি লক ডাউন করেছে লামা উপজেলা প্রশাসন, সংগ্রহ করা হয়েছে ১১ জনের নমূনা।

এই ব্যাপারে বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. অংসুই প্রু মারমা জানান, গত তিনদিন আগে এসব ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের নমুনা চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার রাতে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসে। বর্তমানে এদের মধ্যে দুজন হাসপাতাল আইসোলশনে এ রয়েছে।

সিভিল সার্জন আরো জানান, বান্দরবানে এ পর্যন্ত ১৯৫ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে ও ১০ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে এবং জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ৪ জন।

অন্যদিকে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানের চিকিৎসক ও আয়া’রা যাতে কোয়ারান্টাইনে থাকতে পারে সেই ব্যাপারে যথাযথ উদ্দ্যেগ নেওয়া হয়েছে, তাদের জন্য মেঘলাস্থ পর্যটন মোটেল সরকারী ভাবে বরাদ্দ করা হয়েছে, তাদের যাতায়তের জন্য গাড়ীর ব্যবস্থাসহ সেখানে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসার কাজে যারা নিয়োজিত তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মানুষ সচেতন না হলে করোনা সংক্রামন থেকে বান্দরবানের মানুষকে রক্ষা করা কঠিন হবে, তাই সবার উচিত সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্য বিধি যথাযথ ভাবে মেনে চলা।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
October 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!