

সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার সীমান্তবর্তী তিনটি এলাকাজুড়ে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হত্যা,ধর্ষণ, অপহরণ,চাঁদাবাজিসহ চলছে সন্ত্রাসী তাণ্ডব।এছাড়াও পাহাড়ি তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপের রয়েছে নিরাপদ ঘাঁটি। এসব ঘাঁটিতে নিয়মিত চলে অস্ত্র প্রশিক্ষণ।এ প্রশিক্ষণে যোগ দেয় মিয়ানমারের একটি উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী গ্রুপ। লামা উপজেলার গয়ালমারা,লেমু পালং ও পোপাখাল এলাকা সংলগ্ন মিয়ানমার।এলাকা তিনটি দুর্গম।পায়ে হেঁটে ছাড়া যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা নেই।ওইসব এলাকার বাসিন্দারা পাহাড়ি তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপকে নিয়মিত চাঁদা দিয়েও নির্যাতন থেকে রক্ষা পান না।পিতা-মাতার সামনে থেকে তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে।তাদের এই পৈশাচিক কার্যক্রম নিয়মিত চলে।ওই এলাকায় প্রায় গলাকাটা বা মস্তকবিহিন লাশ পাওয়া যায়।এসব লাশ পাহাড়ি বাঙালিদের।পাঁচজন পাহাড়ি ও বাঙ্গালি ইত্তেফাককে বলেন,স্বাধীন দেশে বসবাস করে আমরা এই তিনটি এলাকার বাসিন্দারা পরাধীন।তারা তিনটি পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত।চাঁদাবাজির এমন অবস্থা যতবার বাথরুম ব্যবহার করবে ততবার সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে হয়।হত্যা,অপহরণ,গুম সেখানকার নিয়মিত ঘটনা। পাহাড়ি তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে মিয়ানমারের উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যোগাযোগ থাকায় তারা উভয়েই দেশে নিয়মিত যাতায়াত করছে।এই উগ্রপন্থিরাও এই তিনটি এলাকার বাসিন্দাদের উপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত।এলাকাবাসী এই অত্যাচার সম্পর্কে বলেন, আরাকান থেকে রোহিঙ্গাদের উপর যেভাবে নির্যাতন চালিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে তেমনিভাবে লামার এই তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপ মিয়ানমারের উগ্রপন্থি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সহায়তায় নির্যাতন চালাচ্ছে।এই এলাকার বাসিন্দারা এখান থেকে চলে গেলে পাহাড়ি তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ও মিয়ানমারের উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী গ্রুপ এই এলাকায় নিরাপদ প্রশিক্ষণ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।এ কারণেই বাসিন্দাদের উপর ধর্ষণ,হত্যা, গুম,অপহরণ ও চাঁদাবাজির মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে।বাসিন্দাদের অভিমত,এই এলাকায় নিরাপদ বসবাসের জন্য সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ছাড়া সম্ভব হবে না।স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তাও একই অভিমত ব্যক্ত করেন।বাসিন্দারা সেনা হস্তক্ষেপের জন্য প্রশাসনের শীর্ষ হস্তক্ষেপ কামনা করেন।লামা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন,গয়ালমারা,লেমুপালং ও পোপাখাল দুর্গম এলাকায় অবস্থিত।পুলিশ সেখানে মাঝে মাঝে জীবন বাজি রেখে যায়।একটি ঘটনা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে একটি গলাকাটা লাশ উদ্ধার করতে থানা থেকে সকালে রওনা দিয়ে পুলিশ গয়ালমারা এলাকায় যায়। সঙ্গে তাদের টর্চলাইটসহ অন্যান্য সামগ্রী ছিল।প্রথমে তারা ৩৫ কিলোমিটার গিয়েছে চান্দের গাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায়। সেখান থেকে ২০ কিলোমিটার পথ হেঁটে ঘটনাস্থলে যায়। লাশ উদ্ধার করে পুনরায় থানায় পৌঁছতে ভোর হয়ে যায়। দুর্গম ও যাতায়াতে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পুলিশের পক্ষে ওইসব এলাকায় নিয়মিত যাওয়া সম্ভব হয় না।ওইসব এলাকায় সংগঠিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সকলেরই জানা বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়।
দেশের সার্বভৌমত্ব ও বাসিন্দাদের জীবন রক্ষার্থে সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই বলে স্থানীয় প্রশাসনের কয়েক কর্মকর্তা জানান।তিনটি এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত নজরদারির বাইরে থাকায় মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন বস্তায় বস্তায় ইয়াবা ও অস্ত্র আসছে বাংলাদেশে।এলাকাবাসী বলেন,নিয়মিত ইয়াবা ও অস্ত্রের চালানের দৃশ্য নীরব দর্শকের মতো দেখছি।পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে সরই এলাকায় সেনা ক্যাম্প স্থাপনের জন্য স্থানীয় জনসাধারণের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে মহামান্য হাইকোর্টের নিদের্শনা চেয়ে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে।ফাঁসিয়াখালীর গয়ালমারায় সেনা ক্যাম্প স্থাপনের জন্য স্থানীয় জনসাধারণ প্রাধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদানসহ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।গয়ালমারা এলাকা থেকে কিছুদিন পূর্বে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা এক বাঙালি যুবতীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করেছে। ২৮৫নং সাঙ্গু মৌজার রুবেল ইসলাম,আব্দুর রহিম, নুরুল হুদা,নজরুল ইসলাম ও মানিক মিয়া জানিয়েছেন, পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের অব্যাহত চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের মুখে জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।পিএইচপি রাঙ্গাঝিরি রাবার বাগান ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম জানান, কয়েক শত রাবার শ্রমিককে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা বাগান থেকে নামিয়ে দিয়েছে।নির্ধারিত হারে চাঁদা দিতে না পারায় রাবার বাগানের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বাগান মালিকদের হুমকি দিয়েছে।ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন মজুমদার জানিয়েছেন, গয়ালমারা এলাকার গভীর অরণ্যে পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নিরাপদে অবস্থান করেন।অ্যাডভোকেট মকবুল আহমদ নামক একজন আইনজীবী সরই এলাকায় সেনা ক্যাম্প স্থাপনের জন্য সরকারের প্রতি নিদের্শনা চেয়ে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেছেন।লামা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন ও রূপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটি সভায় একাধিকবার জানিয়েছেন, পোপা খালের আগার দুর্গম এলাকাগুলো পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা।কিছুদিন পূর্বে পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পোপা খালের আগায় নিরীহ বাঙালি কাঠুরিয়াদের নিমর্মভাবে পিটিয়ে আহত করেছে।(((আবুল খায়ের;ইত্তেফাক)))