এই মাত্র পাওয়া :

শিরোনাম: আসন্ন দুর্গাপূজার প্রস্তুতি নিয়ে হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক বান্দরবানে মহিলা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সমাবেশ বান্দরবান বাজার এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন এর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান বিএনকেএস এর উদ্যোগে টেকনাফের ক্যাম্প-২২ এ শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে বর্ণিল আয়োজনে স্বাক্ষরতা দিবস উদযাপিত ঢাকায় পার্বত্য উপদেষ্টার সঙ্গে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান রাষ্ট্রদূতদের সাক্ষাৎ বান্দরবান সার্বজনীন কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারে শুভ মধু পূর্ণিমা উদযাপিত বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের প্রকল্প প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত ক্যালেন্ডার মেনে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

প্রথম দর্শনেই বঙ্গবন্ধুকে শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করলাম


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :৮ আগস্ট, ২০২০ ৩:৪৫ : অপরাহ্ণ 401 Views

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জন্মশতবর্ষে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। বাঙালির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁকে নিয়ে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণার জন্য বলা হয়েছে কালের কণ্ঠ থেকে। এই সুযোগে যখন অতীতকে ফিরে দেখি, তখন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের উজ্জ্বল স্মৃতিগুলো জ্বলজ্বল করে ভাসে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধার জায়গাটা অভিভূত করে দিল; আমি যখন দেখি আমাদের শিল্প-সাহিত্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর চিন্তায় কত বড় জায়গা রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু ঘাতকরা সেই চিন্তার জায়গাটি আর পূরণ হতে দিল না।

বঙ্গবন্ধুকে তিনবার কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। প্রথমবার দেখি ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। বাংলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন একুশের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে। সেদিনই তাঁকে সরাসরি দেখি। এর আগে দেখার সুযোগ পাইনি। কারণ আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে বাংলা একাডেমিতে যোগদান করি ১৯৭০ সালে।
বঙ্গবন্ধু তখন বাঙালির নির্বাচিত নেতা। ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। স্বাভাবিক নিয়মেই তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা। কিন্তু বাধা সৃষ্টি করছে ইয়াহিয়া খানসহ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। এসব বিষয়ই তখন আলোচিত হচ্ছে।

বাংলা একাডেমির অনুষ্ঠান হচ্ছে বটমূলে। আমরা দুই-তিন শ লোক দর্শক সারিতে বসা। বিদেশি যারা বাংলা ভাষা শিখছে, তাদের হাতে অনুষ্ঠানে সনদপত্র তুলে দিলেন বঙ্গবন্ধু। এমন সময় দেখলাম, কেউ একজন বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে কানে কানে কিছু একটা বললেন। প্রতিক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু ক্ষুব্ধ হলেন। তাঁকে চিন্তিত দেখাল। বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিতে উঠলেন। দর্শক সারিতে বসেছিলেন হোসনা বানু খানম। বঙ্গবন্ধু তাঁকে মঞ্চে এসে একটি রবীন্দ্রসংগীত গাইতে অনুরোধ করলেন। শিল্পী জানতে চাইলেন কোন গান। বঙ্গবন্ধু বললেন ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা’। গান শেষে তিনি ভাষণ দিলেন। কিন্তু ভাষণে তিনি ওই ক্ষুব্ধ হওয়া সম্পর্কে কিছুই বললেন না। দুই দিন পর জানা গেল, ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টোর সঙ্গে একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভুট্টো আসবেন না বলে বৈঠকটি স্থগিত হয়ে গেছে—সে বার্তাটি সেদিন তখন তাঁকে জানানো হয়েছিল।

একজন সাহিত্যকর্মী হিসেবে এটা আমার জন্য একটি অসাধারণ শিক্ষা। একজন রাজনৈতিক নেতা কিভাবে সংগীতের বাণী এবং সুরের মাধ্যমে নিজের উত্তেজনার জায়গা প্রশমিত করলেন এবং মানুষকে দেশপ্রেমের জায়গায় উদ্বুদ্ধ করলেন। সেদিন তিনি উত্তেজিত হলে বাংলা একাডেমি থেকেই একটি বিক্ষোভ মিছিল বেরিয়ে যেত। কিন্তু তিনি সেটা করলেন না। একজন বলিষ্ঠ নেতা যেভাবে সংস্কৃতিকে তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে মিলিয়ে মানুষের দেশপ্রেমকে অনুপ্রাণিত করলেন, তা থেকে একটি শিক্ষা লাভ করলাম; এবং প্রথম দর্শনেই তাঁকে একজন শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করলাম।
আরেকবার বঙ্গবন্ধুকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম ১৯৭২ সালে। সে সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন অধ্যাপক ড. মাজহারুল ইসলাম। তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন। সেটি দিতে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়িতে যাবেন। সঙ্গে নিলেন আমাদের, যাঁরা লেখালেখি করতাম। সেদিন খুব কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়। বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলারও সুযোগ পাই। সেটিও জীবনের উজ্জ্বল স্মৃতি হয়ে রয়েছে।

তৃতীয়বার বঙ্গবন্ধুকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ পাই আবার বাংলা একাডেমিতে। ১৯৭৪ সালে আয়োজন করা হয়েছিল আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। সেটি উদ্বোধনের জন্য বঙ্গবন্ধুকে আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলেন একাডেমির মহাপরিচালক। বঙ্গবন্ধু প্রথমে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথিতযশা সাহিত্যিকরা থাকতে একটি সাহিত্য সম্মেলন আমি কেন উদ্বোধন করব।’ কিন্তু তাঁকে বোঝানো হলো—এটি যেহেতু আন্তর্জাতিক সম্মেলন, প্রধানমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করলে মর্যাদা বাড়বে। তখন তিনি রাজি হলেন।

সেই সম্মেলনের ভাষণ শুনলাম বঙ্গবন্ধুর। তিনি লেখকদের উদ্দেশ করে বললেন, ‘আপনারা দুঃখী মানুষের আনন্দ-বেদনার সবটুকু আমাদের সাহিত্যে তুলে ধরেন। এটা আমাদের সাহিত্যের উপাদান হবে। এভাবে বাংলাদেশের সাহিত্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে। আমরা আমাদের সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিয়ে যাব।’

আজকে যখন সেই সময়গুলো ফিরে দেখি তখন মনে হয়, বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে হয়তো আমাদের শিল্প-সাহিত্যের অনেক বড় জায়গা তৈরি হতো। অনুবাদের মাধ্যমে আমাদের সাহিত্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভিন্নমাত্রায় পৌঁছতে পারত; যেভাবে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ এবং একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পৌঁছতে পেরেছে। বিশ্বকে আমরা দুটি দিন উপহার দিতে পেরেছি। আরেকটি বিষয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়ে বাংলা সাহিত্যকে আর বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে মাতৃভাষায় ভাষণ দিয়ে বাংলাকে বিশ্বমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
September 2025
MTWTFSS
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031 
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!