![](https://www.chttimes.com/wp-content/uploads/2022/07/FB_IMG_1657033551745.jpg)
![](https://www.chttimes.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া যেসব দল ক্ষমতায় গেছে তারা দেশবাসীর কল্যাণে কোনো কাজ করেনি। আর আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকেই মানুষকে দিয়ে যাচ্ছে। দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্য করে যাচ্ছে। এটাই হচ্ছে অন্যদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য।
প্রধানমন্ত্রী সোমবার (৪ জুলাই) গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এক দিনের সফরকালে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তাঁর নির্বাচনী এলাকা টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেছেন। তিনি এর আগে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নবনির্মিত কার্যালয় উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছেই দুপুর পৌনে ১২টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে সঙ্গে নিয়ে পবিত্র ফাতেহা পাঠ, বঙ্গবন্ধু ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাযজ্ঞের শিকার তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।
শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে জাতির পিতাকে হত্যার পর সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতায় গিয়েছিল, তাদের শাসনকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া সব আমলেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে। জেল-জুলুম হয়েছে। অনেকে মারা গেছেন। অনেক লাশ হারিয়ে গেছে। শত নির্যাতনের মধ্যেও আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে সবসময় শক্তিশালী।
তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ওপরে মহান আল্লাহ রয়েছেন। আমার বাবা-মায়ের দোয়া আছে। আর আমার সবচেয়ে বড় শক্তি আপনারাই। আপনাদের শক্তিই আমাদের এগিয়ে নিচ্ছে। আমরা প্রতিটি কাজ পরিকল্পিতভাবে করে যাচ্ছি। ফলে আজকে বাংলাদেশের মানুষ ভালো আছে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারেনি। বেঁচে গেছি। মহান আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন। মহান আল্লাহ যাঁকে হায়াত দেন, তাঁকে দিয়ে কিছু করাতে চান। আমি হয়তো সেই হায়াত পেয়েছি বলেই দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পারছি। আজকে (সোমবার) পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে এসেছি। বাংলার মানুষের ভালোবাসা ও দোয়া না থাকলে এতদূর আসতে পারতাম না। তাই আমি চাই, বাংলাদেশের একজন মানুষও গরিব থাকবেন না। একজন মানুষও না খেয়ে থাকবেন না। দেশের জন্য যতটুকু কাজ করা দরকার ততটুকু করে যাব, এটা হচ্ছে আমার অঙ্গীকার।’
প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি এই সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে নানা বাধা মোকাবিলার কথাও বলেন। তিনি জানান, ‘পদ্মা সেতু বানাতে গিয়ে আমাদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, তা আপনারা চিন্তাও করতে পারবেন না।’ নিজে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দুর্নীতি করব কীসের জন্য? কার জন্য?’ নিজের দুই সন্তান এবং ছোট বোন শেখ রেহানার তিন সন্তান নিজেদের যোগ্যতায় নিজেরা জীবিকা নির্বাহ করছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চার-চার বার ক্ষমতায়। কই তাদের কেউ তো আমাকে কখনও বলেনি, আমায় এই চাকরি দাও, আমায় এই ব্যবসা দাও, এটা দাও, সেটা দাও। তারা নিজেরা চাকরি করছে, নিজেরা পড়েছে, স্টুডেন্ট লোন নিয়েছে, সেই টাকা শোধ দিয়েছে, আবার পড়েছে।’
ছোট বোনকে নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রেহানাও চাকরি করে খায়। বোন প্রধানমন্ত্রী দেখে বোনের ওপর কোনো চাপ দেবে, তাও তো করে না। কোনোদিন কোনো কথা বলে না। বাসে ঝুলে ঝুলে অফিস করে। নিজে কাজ করে খায়। ঘরের কাজ, সেই ঘর ঝাড় দেওয়া, বাথরুম ধোয়া, কাপড় ধোয়া, সব নিজের করতে হয়। রেহানা নিজেই এসব করে। আমাদের এই আত্মমর্যাদা বোধ আছে। কারও কাছে হাত পাতা, কারও মুখাপেক্ষী হওয়া না।’
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের অর্থনীতিতে যে সংকট নিয়ে এসেছে, তা সফলভাবে মোকাবিলার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, করোনার সময় অনেক উন্নত দেশ, যাদের অনেক টাকা, তারা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেয়নি। আমরা দিতে পেরেছি। সবাই মিলে একযোগে কাজ করতে পেরেছি বলেই করোনা থেকে বন্যা মোকাবিলা- যে কোনো পরিস্থিতি আমরা মোকাবিলা করতে পারছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মেনে চলতে হবে। পঁচাত্তরের পরে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা তো ক্ষমতায় এসেছে খাওয়া পার্টি হিসেবে, জনগণকে দেওয়ার জন্য নয়। আর আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকেই মানুষকে দিয়ে যাচ্ছে। মানুষের জন্য করে যাচ্ছে। এটাই হচ্ছে অন্যদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য। আর মানুষের শক্তিটাই আমার কাছে বড় শক্তি। অন্য কোনো শক্তি নয়।
অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দের মধ্যে শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এমপি, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল শেখ, সহসভাপতি ইলিয়াস হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান বিশ্বাস, টুঙ্গিপাড়া পৌর মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুল, কোটালীপাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ, উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী সকালে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে তাঁর পৈতৃক নিবাস টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে সড়ক পথে রওনা দেন। তিনি মাওয়া টোল প্লাজায় টোল দিয়ে পদ্মা সেতুর মাঝামাঝি গিয়ে তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে সঙ্গে নিয়ে কিছু সময় পার করেন। ৯টা ২০ মিনিটের দিকে জাজিরা প্রান্তে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি সেতুর উদ্বোধনী ফলকের সামনে কিছু সময় দাঁড়ান। এরপর বিশ্রাম নেন সেতুর জাজিরা প্রান্তে শেখ রাসেল সেনানিবাসসংলগ্ন সার্ভিস এরিয়া-২-এ।
প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৩ ঘণ্টার যাত্রা শেষে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছান সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে। তাঁর আগমনকে কেন্দ্র করে টুঙ্গিপাড়া সেজেছে বর্ণিল সাজে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মধুমতী নদী ভ্রমণের কর্মসূচি থাকলেও প্রধানমন্ত্রী তাতে অংশ নেননি। তবে তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য মধুমতী নদীতে নৌভ্রমণ এবং পাটগাতী লঞ্চঘাটে নবনির্মিত দৃষ্টিনন্দন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ল্যান্ডিং স্টেশন পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর বিকেল সাড়ে ৩টায় সড়কপথে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে। পথে কোনো যাত্রাবিরতি ছাড়াই বিকেল সাড়ে ৫টায় গণভবনে পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর।