এই মাত্র পাওয়া :

জেল হত্যা দিবস : জাতীর কালো এক অধ্যায়


মুন্নুজান ইসলাম (ঢাকা) প্রকাশের সময় :৪ নভেম্বর, ২০১৯ ৫:১৬ : অপরাহ্ণ 619 Views

৩ নভেম্বর ১৯৭৫, মাত্র ভোর হতে শুরু করেছে। চারটি রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে রয়েছে ঢাকা কারাগৃহের মাটিতে। তখনো কেউ জানত না আসলে কি ঘটতে যাচ্ছে দেশে। চারিদিকে অজানা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের ৮০ দিনের মাথায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামরুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলীকে একদল দুষ্কৃতকারী কারাগারের ভেতরে ঢুকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর এই চার নেতাকে মন্ত্রীসভায় যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় এই চার নেতা সেই প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। এতে বিশ্বাসঘাতক মোশতাক রাগান্বিত হয়ে জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। এর কিছুদিন পরেই ঘাতকরা জেলের ভেতরে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করে চার নেতাকে একত্র করে গুলি চালিয়ে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এ ব্যাপারে তাদের নামে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি মামলা করা হয় ও একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। কিন্তু ৭ নভেম্বর সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন এইসব হত্যা ও ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি তার সরকার। বরং ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ আরো বন্ধ করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু ও জেলহত্যাকারীরা বিদেশের দূতাবাসে পদমর্যাদাযুক্ত চাকরির মাধ্যমে পুরস্কৃত হয়।
এ মামলার পুনরায় কার্যক্রম শুরু হয় দীর্ঘ ২১ বছর পর। এই ২১ বছর মামলার সকল কার্যক্রম ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া শুরু করে। মামলার রায়ে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয় নিম্ন আদালত। কিন্তু ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই পলাতক আসামিকে বেকসুর খালাস এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া চারজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আসামিদের খালাস করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বাতিল ও বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রাখার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। তবে দুই আসামি পলাতক থাকায় বিচারের রায় কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ পৃথক বাণীতে চার নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি এক বিবৃতিতে জেল হত্যা দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালনের জন্য দলের নেতাকর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী এবং সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2025
MTWTFSS
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
আলোচিত খবর