কৃষকের পরম বন্ধু বঙ্গবন্ধু


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৩ আগস্ট, ২০২০ ১১:০০ : অপরাহ্ণ 336 Views

ড. মো. শহীদুর রহমান খান

শোকের মাস আগস্ট। গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করছি বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন জনগণ অন্তঃপ্রাণ। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যুদ্ধ-পরবর্তী দেশের উন্নয়ন করতে হলে এদেশের কৃষকের উন্নয়ন করতে হবে। দেশের প্রকৃত উন্নয়ন করতে হলে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে।

সে লক্ষ্যে জাতির পিতা কৃষকের উন্নয়নের জন্য নিয়েছিলেন এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। তাদের সব বকেয়া খাজনা ও সুদ মওকুফ করে দিয়েছিলেন। ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা ও সুদ চিরতরে মওকুফ করে দিয়েছিলেন, যা আজ অবধি বিদ্যমান। বঙ্গবন্ধু ছিলেন উদার মনের মানুষ। তিনি বুঝেছিলেন, কৃষি তথা কৃষকের উন্নয়ন করতে হলে দক্ষ কৃষি গ্রাজুয়েট তৈরি করতে হবে। সে কথা ভেবে ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে কৃষি গ্রাজুয়েটদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান করেন, যার ফলস্বরূপ বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হল কৃষি। কৃষিতেই বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও মুক্তি নিহিত। কৃষির এই অমিত সম্ভাবনাকে ঘিরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সুখী ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। জাতির পিতার সূচিত পথ ধরে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এ দেশের কৃষিকে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে গত চার দশকের বেশি সময় ধরে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা পূরণে ধারাবাহিকভাবে কৃষি, কৃষক ও কৃষিবিদরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে একটি কুচক্রি মহল বাংলাদেশকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোককে শক্তিতে পরিণত করে বলিষ্ঠ ও আপসহীন নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেলে রূপান্তর করেছেন। জাতির পিতার স্বপ্ন ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কৃষির আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, যা খাতওয়ারি বরাদ্দে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কৃষি বাজেটের মধ্যে আধুনিক কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বাবদই বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। মহামারী করোনার আঘাতে বিশ্বব্যাপী কৃষির উৎপাদন বা উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটলেও প্রধানমন্ত্রীর সুপরিকল্পিত দিকনির্দেশনায় করোনার সময়েও আমাদের কৃষির উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বে চাল, পাট, মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়, ছাগলের মাংস উৎপাদনে চতুর্থ এবং আম ও আলু উৎপাদনে সপ্তমসহ রয়েছে আরও অনেক সাফল্য।

জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল খুলনা বিভাগের কৃষির উন্নয়ন আরও বেগবান করার জন্য খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক মানের কৃষি গ্রাজুয়েট তৈরি হয়ে খুলনা তথা সমগ্র বাংলাদেশের কৃষিকে আরও সমৃদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনে ভূমিকা রাখবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

আমি আশা করি, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের কৃষি শিক্ষাবিষয়ক জ্ঞান অর্জন, গবেষণা ও জ্ঞানচর্চা করে ভবিষ্যতে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজন্ম লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে।

অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রহমান খান : উপাচার্য, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

(আগামীকাল প্রকাশিত হবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. বিশ্বজিৎ ঘোষের লেখা)

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
December 2024
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!